কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি : ১৯ জুলাই বিকালে কেরানীগঞ্জের বাসা থেকে বের হন উপজেলার ইস্পাহানি ডিগ্রি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র রিয়াজ হোসেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দিতে অন্যান্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে সে বসিলা ব্রিজ পেরিয়ে মোহাম্মদপুরে অবস্থান নেয়। যাওয়ার সময় মা শেফালী বেগম তাকে যেতে বারণ করেন।
মায়ের বারণ শুনে রিয়াজ বলে- সবাই যদি ঘরে থাকে তাহলে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি কখনো পূরণ হবে না। এরপর সে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এই যাওয়াই ছিল তার শেষ যাত্রা। ওই দিন বিকালে মোহাম্মদপুর এলাকায় মাথায় গুলি লেগে নিহত হন রিয়াজ।
লাশ পড়ে ছিল সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে। অনেক জায়গায় খোঁজার পর ২০ জুলাই বিকালে ওই হাসপাতালের মর্গে রিয়াজের লাশের সন্ধান পায় পরিবার।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার তারানগর ইউনিয়নের ছোট ভাওয়াল গ্রামের বাসিন্দা আসাব উদ্দিনের তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিল রিয়াজ।
বোন আফরোজা বলেন, বাবা ও দুই ভাই কৃষিকাজ করে কোনো রকম সংসার চালায়। সবার ছোট রিয়াজকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। ওর ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি করবে। ও বলতো, এই আন্দোলন না করলে মেধাবীদের অনেকেই নাকি চাকরি পাবে না।
রিয়াজের মা শেফালী বেগম বলেন, আমার কলিজার টুকরা সন্তানকে যারা মেরেছে আল্লাহপাক তাদের উপযুক্ত বিচার করবেন। আজ অবধি সরকারি কেউ আমাদের কোনো খোঁজ নিতে আসে নাই। এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার কেউ খোঁজ নেয় নাই। আমার কোনো দাবি নাই। আমার ছেলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে শহিদ হয়েছে তা যেন বাস্তবায়ন হয়। দেশের মানুষ যেন আমার ছেলেকে ভুলে না যায়।
জানা যায়, বাবার সঙ্গে কৃষিকাজের পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিলেন রিয়াজ। বাড়তি উপার্জনের আশায় কিছুদিন ধরে একটি কুরিয়ার সার্ভিসে ডেলিভারিম্যানের চাকরি নেন। ইচ্ছে ছিল সরকারি চাকরিজীবী হওয়ার।
বাবা আসাব উদ্দিন বলেন, আমার বাবাও আওয়ামী লীগ করতেন, আমিও আওয়ামী লীগ করি। আমার ছেলে কোনো দল করত না। আমার ছেলেকে কেন এভাবে মরতে হলো? আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, ঘটনাটি শুনেছি।